Thursday, January 17, 2019

গরম কালের চেয়ে শীতকালে হার্ট অ্যাটাক ও মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশী

শীতকালীন সময়ে  হার্ট অ্যাটাক ও মৃত্যুর ঝুঁকি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে–স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই হৃদরোগের সংখ্যার প্রকাশ করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে জানানো হয়।
ছবি: সংগৃহীত

শীতকালে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অভ্যন্তরীন তাপমাত্রা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। ‘কার্ডিওভাস্কুলার’ অর্থাৎ হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের জন্য শরীরের অভ্যন্তরীন তাপামাত্রা কমে যাওয়া অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

কারণ, ঠান্ডার সংস্পর্শে আসলে বুক ব্যথা শুরু হতে পারে। হৃদরোগের আক্রান্ত কিংবা আগে হৃদরোগের চিকিৎসা করিয়েছেন এমন প্রতিটি মানুষের জন্য শীতকাল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সময়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে শীতকালে বুকে যে কোনো ধরনের অস্বস্তি, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, ঘাড়, বাহু, চোয়াল ও কাঁধে ব্যথা হওয়া এবং দম নিতে অসুবিধা হওয়াকে মোটেও হেলাফেলা করা যাবে না। কারণ এগুলো হল হৃদযন্ত্রের কার্য সম্পাদনে ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ।

ভারতের নয়া দিল্লির দয়ার্কাতে অবস্থিত ভেঙ্কাটেশ্বর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অনিল ধাল বলেন, “শীতকালে হৃদযন্ত্রের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে রক্তচাপ বৃদ্ধি। শীতল আবহাওয়ায় ধমনী সংকুচিত হয়ে থাকার কারণে তা দিয়ে রক্ত সরবরাহ করতে হৃদযন্ত্রকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। শীতকালে রক্তে নির্দিষ্ট কিছু প্রোটিনের মাত্রাও বেড়ে যায়, ফলে ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায় অনেক বেশী।”
“শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক মাত্রা কমে যাওয়াকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় ‘হাইপোথামিয়া’ যা অনেক হার্ট অ্যাটাকের কারণ।”

বৃদ্ধ এবং যাদের হৃদযন্ত্রে সমস্যা আছে তাদের হৃদযন্ত্রের পক্ষে এই বাড়তি চাপ সহ্য করা কঠিন হয়ে পরে ফলে বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের শঙ্কা।
এছাড়াও, শীতকালে কোলেস্টেরলের মাত্রা অতিরিক্ত ওঠানামা করে। যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

হার্ট কেয়ার ফাইন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া এর সভাপতি ডা. কে.কে. আগারওয়াল বলেন, “প্রত্যেক হৃদরোগীর উচিত শীতকালে হৃদযন্ত্র এবং মানসিক চাপ বিষয়ক পরীক্ষা করানো। খাওয়ায় অনিয়ম, রাত জাগা, সময়মতো ওষুধ সেবন না করা এবং ধূপমান বা মদ্যপানের কারণেই হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে শীত কালে ।”

করণীয়

* শরীরচর্চা স্বাস্থ্যের জন্য সবসময়ই ভালো, আর হৃদরোগীদের জন্য তা অবশ্য কর্তব্য। তবে শীতের সকালে তীব্র ঠাণ্ডায় হাঁটতে না যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বরং বিকালে কিংবা সন্ধ্যায় সূর্যের আলো ফুরিয়ে যাওয়া আগে হাঁটতে যাওয়া ভালো।

* শরীরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখতে ঘরের ভেতরে বেশি সময় পার করা উচিত। অন্যান্য শীতের কাপড়ের পাশাপাশি হাত ও পায়ে মোজা পরতে হবে। গোসল করতে হবে গরম পানি দিয়ে।

* একবারে ভারী আহার সব বয়সেই হৃদযন্ত্রের উপর বাড়তি চাপ ফেলে। তাই স্বাস্থ্যকর খাবারও কম পরিমাণে নিয়ে কয়েকবারে খেতে হবে। পানি ও লবণ গ্রহণের মাত্রার উপর নজর রাখতে হবে।

* যেকোনো বিপদ-আপদের জন্য পুরো পরিবারকে প্রস্তুত থাকতে হবে। বুকে অস্বস্তি, ঘাম, হাঁসফাস অনুভুতি, ঘাড়, কাঁধ কিংবা চোয়ালে ব্যথা, পায়ের তলায় ঘাম ইত্যাদি সমস্যাকে অবহেলা করা যাবে না। একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

মোবাইল ফোনের ডাটা প্যাকেজ এর সাত দিনের নিচের সকল প্যাকেজ বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার

ছবি: সংগৃহীত

আগামী ২৭ই জানুয়ারী পর থেকে বন্ধ হচ্ছে মোবাইল কোম্পানিগুলোর ঘণ্টায় ঘণ্টায় প্যাকেজ, তিন দিনের প্যাকেজ, ৫ দিনের প্যাকেজসহ সবগুলো ছোট ডাটা প্যাকেজ। এ সকল ছোট প্যাকেজ গুলোতে প্রতারিত হয়ে আসছিলেন গ্রাহকরা। ২৭ জানুয়ারির পর থেকে ৭ দিনের নিচে টকটাইম বা ইন্টারনেটের আর কোনো প্যাকেজ থাকবে না। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন- বিটিআরসি সবগুলো মোবাইল ফোন অপারেটরকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। এটা মানার ব্যাপারেও সতর্ক করেছে বিটিআরসি।

গতকাল বুধবার টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ কথা জানিয়েছেন বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক।

টেলিযোগাযোগ খাতে ২০১৮ সাল অর্জন ও সফলতার বছর ছিল উল্লেখ করে জহুরুল হক বলেন, চলতি বছরে সেবার মান উন্নত করার ওপরই জোর দিচ্ছেন। টিআরএনবির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সজলের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে। বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ছাড়াও দুই জন কমিশনার, মহাপরিচালক, পরিচালক ও কমিশন সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মোবাইল ফোনের ছোট প্যাকেজগুলোতে  প্রতারিত হয়ে আসছিলেন গ্রাহকরা। ওই প্যাকেজগুলো কম টাকায় দিলেও ইন্টারনেটসহ আনুষঙ্গিক সুবিধাগুলো গ্রাহকরা শেষ করতে পারতেন না। ফলে তার বেঁচে যাওয়া ইন্টারনেট নষ্ট হয়ে যেত। আবার তাকে কিনতে হতো। অন্তত ৭ দিনের প্যাকেজ থাকলেও গ্রাহক হিসেব করে খরচ করতে পারেন।

বাংলাদেশের চার মোবাইল ফোন অপারেটরের মধ্যে গ্রাহক সংখ্যা ও রাজস্বের দিক দিয়ে ৪০ শতাংশের বেশি বাজার হিস্যা রয়েছে কেবল গ্রামীণফোনের। তাদের গ্রাহক ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ। জহুরুল হক বলেছেন, এসএমপি হয়ে গেলে সবাই ব্যবসা করতে পারবে। কারও গ্রাহক ৪০ শতাংশের বেশি হবে না। আগামী কমিশনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

জানা গেছে, বার্ষিক রাজস্ব আয়ের দিক দিয়ে গ্রামীণফোন আরও এগিয়ে আছে। ২০১৭ সালে বাজারের মোট রাজস্ব আয়ের ৫৩ শতাংশ পেয়েছে তারা। বাজারে একক কর্তৃত্বের পাশাপাশি সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ, বাজারের সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ নষ্ট করে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘ষড়যন্ত্রমূলক যোগসাজশ’, অধিগ্রহণ বা একীভূতকরণ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে এসএমপি প্রবিধানমালায়। এই নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে বিটিআরসির হাতে।

চলচিত্রের নায়িকারা সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নপত্র কিনলেন

ছবি: সংগৃহীত

একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন বেশ কয়েকজন চলচিত্র নায়িকা। ১৫ই জানুয়ারী ২০১৯ তারিখ সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে দলটি। এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট সূত্রে পাওয়া খবরে  এ পর্যন্ত তারকাদের মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন, মৌসুমী, অপু বিশ্বাস, জ্যোতিকা জ্যোতি, শমী কায়সার, সুবর্ণা মুস্তাফা, ফাল্গুনী হামিদ, তারিন, সারাহ বেগম কবরী, সুজাতা, অঞ্জনা, দিলারা, অরুণা বিশ্বাস, রোকেয়া প্রাচী, শাহনূর।
আওয়ামী লীগের প্রতিটি মনোনয়নপত্রের জন্য নেওয়া হচ্ছে ত্রিশ হাজার টাকা।

বাংলাদেশে ৩৫০ আসনে জাতীয় সংসদে নির্বাচন হয়। এর মধ্যে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ ৪৩টি, জাতীয় পার্টি ৪টি, বিএনপি ১টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটভুক্ত হয়ে ১টি আসন পাচ্ছে।

কী হইতেছে তাবলীগ জামাতের ভিতরে? সমস্যার সমাধান হবে কি ভারতে?

সরকার তাবলীগ জামাতের বিভক্তি মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বিশ্ব ইজতেমা করার জন্য সংগঠনটির দুই গ্রুপের প্রতিনিধিদের ভারতের দেওবন্দে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে।এই উপমহাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ভারতের দেওবন্দে ফতোয়ার জন্য পাঠানোর এই উদ্যোগকে সরকারের পক্ষ থেকে তাবলীগ জামাতকে ঐক্যবদ্ধ রাখার শেষ চেষ্টা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
 ছবি: সংগৃহীত

তাবলীগ জামাতের মধ্যে বিভক্তির কারণে এবার বিশ্ব ইজতেমা নির্ধারিত সময়ে হতে পারেনি এবং অনিশ্চয়তা আরো বেড়েছে। তাবলীগ জামাতের নেতা ভারতীয় সাদ কান্দালভিকে নিয়ে বাংলাদেশে সংগঠনটির প্রতিপক্ষ দুটি গোষ্ঠীই যার যার অবস্থানে অনড় রয়েছে। তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপ এবার আলাদা আলাদাভাবে ঢাকার কাছে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার তারিখ ঠিক করেছিল।

সেজন্য টঙ্গীর সেই ইজতেমা মাঠের দখল নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে গত ২০১৮ইং সালের ১লা   ডিসেম্বর। সেই ঘটনার পরে সরকার তাবলীগের দু'টি গোষ্ঠীর সাথে বৈঠক করেছিল এবং সেই বৈঠকে ইজতেমা স্থগিত করা হয়েছিল।

"সাদ (কান্দালভি) কিছু কথা বলেছেন। এটা আলেম ওলামা সমাজ মনে করেন, সেটা কোরআন ও সুন্না বিরোধী। আবার সাদ সাহেবের পক্ষের লোকেরা বলছেন, উনি সেটাকে রুজু করেছেন, মানে প্রত্যাহার করেছেন। তো এখন দেওবন্দের কর্তৃপক্ষ এটাকে অর্থ্যাৎ এই রুজু করাটাকে গ্রহণ করেছেন কিনা বা তা কার্যকর হয়েছে কিনা -এটা দেখার জন্য বাংলাদেশ এর ধর্ম মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে তাবলীগের দুই পক্ষ দেওবন্দ যাবে।" 

তাবলীগে বিরোধ মেটানোর জন্য কয়েক দিনের মধ্যে ভারতের দেওবন্দে ফতোয়া নিতে যারা যচ্ছেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী নিজেই সেই দলের নেতৃত্ব দেবেন।কিন্তু বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদ থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এর সাথে জড়িতরা আলাদা আলাদাভাবে কাজ করছেন।
ভারতের সাদ কান্দালভিকে নিয়েই এই যে বিভক্তি, সেই সাদ কান্দালভির পক্ষের অংশের আশরাফ আলী অভিযোগ করেছেন, হেফাজতে ইসলাম এখন তাবলীগ জামাতকেও নিয়ন্ত্রণে নেয়ায় সেখানে রাজনীতি ঢুকে এই বিভক্তি এসেছে।

"হেফাজতে ইসলামের সাথে আমাদের তাবলীগেরই একটা অংশের লিঁয়াজো হয়ে যাওয়ার কারণে বাইরের লোক ঢুকে গেছে। আর সেকারণে একটা রাজনৈতিক স্টাইল এখানে ঢুকে গেছে। "আশরাফ আলী আরো বলেছেন, "এখন আমাদের দুই অংশের মধ্যে একেবারে নীতিগত পার্থক্য হয়ে গেছে। এটা নয় যে শুধু মনমালিন্য হয়েছে এখানে মত পার্থক্য ও তৈরী হয়েছে। "সাদ কান্দালভি তাবলীগ জামাতে কিছু সংস্কারের কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "ধর্মীয় শিক্ষা বা ধমীয় প্রচারণা অর্থের বিনিময়ে করা উচিত হবে না "। তাঁর এসব বক্তব্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য জায়গার মতো বাংলাদেশেও তাবলীগ জামাত বিভক্ত হয়ে পড়েছে  তাবলীগের নেতৃত্ব নিয়ে নিয়ে বিরোধও এই বিভক্তির অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করেন।

তবে ভারতের দেওবন্দে গিয়ে যে সমঝোতা হয়ে যাবে, সেটা তাবলীগের দুই পক্ষের এই নেতারা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না।ধর্ম প্রতিমন্ত্রীও বলছেন তারা একটা শেষ চেষ্টা করছেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে নিকৃষ্ট নির্বাচন হয়েছে : মাইলাম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার ও রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম বলেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর পৃথিবীর গণতান্ত্রিক ইতিহাসের নিকৃষ্ট নির্বাচন হলো ২০১৮ ইং  সালের ৩০ ডিসেম্বরের বাংলাদেশ এর জাতীয় নির্বাচন। আসল কথা হলো ক্ষমতাসীন সরকার ‘নির্বাচনের ফলাফল জোর করে তাদের পক্ষে নিয়েছে, আর যারা নিজেদের সরকার বলে দাবি করছে তারা গণতান্ত্রিক সরকার নয়।
 ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচন, ভঙ্গুর গণতন্ত্র, ক্ষমতাসীন  সরকারের ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারিতাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দ্য ফ্রাইডে টাইমসের চলতি সংখ্যায় লেখা এক বিশেষ নিবন্ধে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন মাইলাম।

নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ এবং কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে নিবন্ধে কড়া সমালোচনা করে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইলাম বলেন, তাতে বিশ্বশান্তিরক্ষা মিশনে বাহিনীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং প্রশ্ন তৈরি হবে।

জাতীয় নির্বাচনের ভোটের চিত্র তুলে ধরে মাইলাম বলেন, ‘বিরোধী দলের প্রার্থীরা যেন তাদের আসনগুলোতে কোনো রকমের প্রচার-প্রচারণা না চালায়, বাইরে না যায়, সে জন্য হুমকি আর ভয় দেখানো হয়েছিল। মিথ্যা মামলায় অনেককে আটক করা হয়। অনেকের নামে আগেই আদালতে প্রহসনের মামলা দায়ের করা ছিল। কিছুসংখ্যক মানুষকে গুম করা হয়।

গ্রামে মহিলা ভোটারদের ভোট না দিতে ভয় দেখিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আর যারা ভোট দিতে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছে তাদেরকে হুমকি দিয়ে কিংবা পুলিশ দিয়ে বাধা দেয়া হয়েছে। আর কেন্দ্রের ভেতরে আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজন ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছে। আমার এক বন্ধু জানিয়েছে, ‘সে যে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিল তার সবগুলো ভোট কাস্ট করা হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষে’।

পুলিশকে এবং তাদের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগকে এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি যেটা বলি এ রকম নির্বাচনের ফল বাংলাদেশের কোনো মানুষই বিশ্বাস করবে না। এমনকি আওয়ামী লীগের সমর্থকেরাও না। বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ সমর্থকও এ ভোটের ফলকে অতিরঞ্জন মনে করে যদিও তারা মুখ ফুটে এ কথা বলার সাহস পাবে না।’

মাইলাম লিখেছেন, ‘যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছিলেন তারা জানতেন, নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে, কয়েকদিন আগে এবং নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগ যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে তা ছিল দলকে জেতানোর পরিকল্পনা। তাই পর্যবেক্ষকেরা হতবাক হননি। এটাও স্পষ্ট ছিল যে, আওয়ামী লীগ কী করবে তা ছক করে রেখেছে। তবে সেনাবাহিনী নির্বাচনে কেমন ভূমিকা রাখবে সেটা নিয়ে কারো আগাম ধারণা ছিল না।

আমার ধারণা, নির্ধারিত সময়েরও দুই সপ্তাহ পর সেনাবাহিনী মাঠে নামিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আমাদের মধ্যে এখনো যাদের স্মৃতি উজ্জ্বল তাদের মনে আছে, অতীতে গণতন্ত্রের জন্য সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল আশাব্যঞ্জক। ধারণা করেছিলাম তারা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করবে এবং নির্ভুল গণনায় সহায়তা করবে। আমরা যারা সেনাবাহিনীকে নিয়ে আশা করেছিলাম যে, এবারো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে তারা গভীরভাবে হতাশ হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘কোনো বিরোধী দল ছাড়াই আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে একদলের শাসন কায়েম করে। এরপরই যুক্তি উঠে এ সরকার অবৈধ, নিরপেক্ষ কমিশনের অধীনে নতুন নির্বাচনের আয়োজন করা যেতে পারে। বিএনপি নির্বাচন বয়কট না করলে সরকার জয়ের কোনো সুযোগ পেত না এ রকম কথাও শুনা যায়।’

নির্বাচনে ভোট চুরি হয়েছে উল্লেখ করে মাইলাম আরো বলেন, ‘ভোট চুরির নির্বাচনের পর বাংলাদেশের মানুষের মনের অবস্থাটা কেমন তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ক্লিপের উদাহরণ টেনেই বুঝিয়ে দেয়া যায়। ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, একটি ক্লাসরুমে পাঠ নিতে বসে আছে ১০-১১ বছর বয়সী ২০ জনের মতো শিক্ষার্থী। কাসে এসে শিক্ষক ব্ল্যাকবোর্ডে লিখলেন ২+২=৫ এবং সব ছাত্রকে নির্দেশ দিলেন এটাই সত্য, মানতে হবে।
একজন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানালো এবং বলল, না- এটা সত্য নয়। আমরা সবাই জানি ২+২=৪। অবশেষে প্রতিবাদ করায় ছাত্রটিকে শাস্তি দেয়া হয় এবং হত্যা করা হয়। তারপর শিক্ষক আবার পাঠে মন দিলেন এবং উচ্চস্বরে পড়া শুরু করলেন ২+২=৫। শেষ দিকে দেখা যায় ভুল লেখা থেকে পেন্সিল একবার সরে আসে এবং হিসাবে পাঁচের বদলে শিক্ষার্থীরা সেটাকে চার লেখা শুরু করে।

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার বার্তাটা তুলনা করা যায় ব্রিটিশ উপন্যাসিক এবং সাংবাদিক জর্জ ওরওয়েলের সেই বার্তার সাথে। বার্তাটা এমন, সরকার নিজের ইচ্ছেমতো করে কোনটা সত্য সে ঘোষণা দেয় কিন্তু দিন শেষে মানুষ সেটাকে আসলে মেনে নেয় না। তারা প্রকৃত সত্যের ছাঁকুনি দিয়েই সব কিছু বিচার করে। প্রকৃত কথা হলো নির্বাচনের ফলাফল (৩০ ডিসেম্বরের ভোট) চুরি করা হয়েছে। আর যারা নিজেকে সরকার দাবি করছে তারা অবৈধ।’