ছবি: সংগৃহীত |
প্রতি চার বছর পর টুর্নামেন্ট আয়োজিত হলেও, বিশ্বকাপের উম্মাদনা প্রায় প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচেই থাকে। কোনো দলের জয় কিংবা পরাজয়ের চিত্র নিয়ে সুক্ষ্ণ বিশ্লেষণের সাথে বিস্তর আলোচনায় বসেন ক্রিকেটবোদ্ধারা। খেলোয়াড়দের মানসিক দৃঢ়তা, অভিজ্ঞতা, আক্রমণ কৌশলসহ সকল খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে বিচার করা হয় প্রত্যেকটি দলকে। তবে একটি দলের পারফরম্যান্সের আগাম চিত্র অনুমান করা যায় সেই দলের অধিনায়কের অধিনায়কত্ব কৌশল দেখে।
একজন অধিনায়ক নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দলকে জয়ের জন্য উজ্জীবিতরাখতে পারেন । অধিনায়কের একটি সাহসী পদক্ষেপই নিশ্চিত হার এড়িয়ে দলকে পৌঁছে দিতে পারে জয়ের বন্দরে। আমাদের আজকের আলোচনা সাজানো হয়েছে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় ২০১৯ বিশ্বকাপের সেরা ৫ অধিনায়ককে নিয়ে৷
৫. ফ্যাফ ডু প্লেসিস (সাউথ আফ্রিকা): সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ওয়ানডেতে যে কয়েকজন অধিনায়কের অধীনে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন ফ্যাফ ডু প্লেসিস। তার অধিনায়কত্বে প্রথম ১৭টি ওয়ানডে ম্যাচের মধ্যে ১৫টি ম্যাচেই জয়ের দেখা পায় প্রোটিয়ারা। অধিনায়ত্বের পাশাপাশি ব্যাটসম্যান হিসেবেও দেশ এবং দেশের বাইরে যথেষ্ট নামডাক কুড়িয়েছেন তিনি।
১১৯ ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে প্লেসিস সংগ্রহ করেছেন ৪৬৯৩ রান। ২৯টি অর্ধশতকের সাথে ১০টি সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেছেন বিস্ময়কর ৮৮.৫৮ স্ট্রাইক রেটে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে ডি ভিলিয়ার্সের অধীনে সেমিফাইনাল খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১৭ সালে অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাড়ালে ভিলিয়ার্সের স্থলাভিষিক্ত হন প্লেসিস। বর্তমানে তার নেতৃত্বেই আইসিসির সর্বশেষ ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় অবস্থানে আছে প্রোটিয়ারা। প্লেসিসের নেতৃত্বে আসন্ন বিশ্বকাপের ট্রফি ছুঁয়ে দেখার স্বপ্নটা দেখতেই পারে সাউথ আফ্রিকার সমর্থকেরা।
৪. বিরাট কোহলি (ভারত): মহেন্দ্র সিং ধোনির যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে বহুদিন আগে থেকেই বিরাট কোহলির নাম উচ্চারিত হচ্ছিলো। টেস্টে ধোনির অবসরের পর ভারতীয় দলের টেস্ট অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পেয়েছিলেন কোহলি। আর ধোনি অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পর অনুমিতভাবেই ওয়ানডে দলেরও দায়িত্ব দেয়া হয় এই ব্যাটসম্যানকে। জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করার আগে কোহলি আইপিএলের দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। দেশের মাটিতে ভারত নিয়মিত সিরিজ জিতলেও অভিযোগ ছিলো, দেশের বাইরে ভারত ভালো খেলতে পারে না।
কোহলি নেতৃত্বে আসার পর টেস্ট ও ওয়ানডে উভয় ফরম্যাটে এবং সব ধরনের কন্ডিশনেই ভারত সিরিজ জিতেছে। সম্প্রতি তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়াকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজ হারিয়েছে ভারত। বর্তমানে আইসিসির ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে আছে দলটি। ২০১৫ বিশ্বকাপে ভালো খেলেও ফাইনাল খেলতে পারেনি ভারত। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে হেরেছিল কোহলির দল৷ দলের সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৯ বিশ্বকাপটা নিশ্চয়ই হাতছাড়া করতে চাইবেন না বিরাট কোহলি।
৩. সরফরাজ আহমেদ (পাকিস্তান): পাকিস্তান বরাবরই ক্রিকেটের সবচেয়ে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ দলগুলোর একটি। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ের সবার শেষে থেকেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পাকিস্তান। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সরফরাজের বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব প্রশংসা কুড়িয়েছে সমালোচকদের থেকে। পাকিস্তানকে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের স্বাদ দেয়া এই উইকেটরক্ষকব্যাটিংয়েও কম যান না।
৩১ বছর বয়সী সরফরাজ পাকিস্তানের জার্সিতে খেলেছেন ৯৯টি ওয়ানডে ম্যাচ। ৮৪.৪৭ স্ট্রাইক রেটে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৮৯৫ রান। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটের পেছনেও দারুণ আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে থাকেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। আসন্ন বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে টুর্নামেন্টের ফেভারিট দলগুলোর মধ্যে রাখেননি ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা। তবে চমক দেখাতে অভ্যস্ত পাকিস্তান নিশ্চয়ই সরফরাজের নেতৃত্বে আরেকটি শিরোপা জেতার জন্যই ইংল্যান্ডে পা রাখবে।
২. এউইন মরগান (ইংল্যান্ড): ইংল্যান্ড এমন একটি দল, যারা সীমিত ওভারের ক্রিকেটের চেয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে বেশি গুরুত্ব দেয়। তবে ২০১৫ বিশ্বকাপে দলের ভরাডুবির পর এই নীতি থেকে সরে আসে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। অভিজ্ঞ কিন্ত অসফল ক্রিকেটারদের তুলনায় তরুণ ক্রিকেটারদের উপর আস্থা রাখছে ইংল্যান্ড টিম ম্যানেজমেন্ট। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপের পর বদলে যাওয়া দলগুলোর একটি হলো ইংল্যান্ড। এউইন মরগানের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক সময়ে দলটি প্রচুর উন্নতি করেছে।
মরগানের নেতৃত্বে ইংল্যান্ড তাদের বহু প্রচলিত রক্ষণশীল ক্রিকেটীয় মনোভাব থেকে সরে এসে খেলছে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট। ওয়ানডে ক্রিকেটে উন্নতি করতে হলে যে ভয়ডরহীন ক্রিকেটের কোনো বিকল্প নেই, তা এই বামহাতি ব্যাটসম্যানের অধিনায়কত্ব কৌশল দেখেই বোঝা যায়৷ শুধু অধিনায়ক হিসেবে নয়, নিজেও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে দলকে উপযুক্ত নেতৃত্ব দেন এই ইংলিশ অধিনায়ক। ৩২ বছর বয়সী মরগান নিশ্চয়ই আসন্ন বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডের দীর্ঘ দিনের আন্তর্জাতিক ট্রফি খরা ঘোচাতে চাইবেন।
১. মাশরাফি বিন মর্তুজা (বাংলাদেশ): ক্যারিয়ারের সেরা সময়টায় হাঁটুর চোটের কারণে মাশরাফিকে নিয়মিতভাবে দলে পায়নি বাংলাদেশ। সাকিব, মুশফিকুরের নেতৃত্বে কয়েকটি ম্যাচে ভালো ফলাফল করতে পারলেও ধারাবাহিক ভাবে সাফল্যের দেখা পাচ্ছিলো না দলটি৷ এমন অবস্থায় চোট থেকে সদ্যই দলে ফেরা অভিজ্ঞ মাশরাফির উপরে আস্থা রাখে বিসিবি৷ ২০১৪ সালের শেষের দিকে মাশরাফিকে পুনরায় টাইগারদের অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করে টিম ম্যানেজমেন্ট। নতুন মেয়াদে দায়িত্ব পেয়ে জিম্বাবুয়ের সাথে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজটি বাংলাদেশকে জেতান ৫ – ০ ব্যবধানে।
২০১৫ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের সাথে অবিশ্বাস্য জয়ে দলকে তুলেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে। বিশ্বকাপের পর তার নেতৃত্বে পাকিস্তান, ভারত ও সাউথ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলের সাথে বাংলাদেশ ঘরের মাটিতে সিরিজ জিতেছে। মাশরাফির নেতৃত্বে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলেছে টাইগার বাহিনী। অধিনায়ক হিসেবে দুর্দান্ত মাশরাফি এখনো দলের পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টের মূল আস্থার প্রতীক।
নির্দিষ্ট সময়ে আইসিসির র্যাঙ্কিং টেবিলের শীর্ষ ৮ দলের মধ্যে থাকার কারণে এবারের বিশ্বকাপে সরাসরি অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। আসন্ন বিশ্বকাপের পরই সব ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিতে পারেন মাশরাফি। বিদায়ের আগে ‘ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাসটিক’ এর কাছ থেকে আরেকটি দুর্দান্ত টুর্নামেন্ট উপহার চাইতেই পারে ১৬ কোটি বাংলাদেশি।
সূত্র : বিডি অনলাইন নিউস ২৪ খেলাধুলা