ছবি : সংগৃহীত |
বাংলাদেশে সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচন, ভঙ্গুর গণতন্ত্র, ক্ষমতাসীন সরকারের ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারিতাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দ্য ফ্রাইডে টাইমসের চলতি সংখ্যায় লেখা এক বিশেষ নিবন্ধে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন মাইলাম।
নির্বাচনে সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ এবং কার্যকর ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছে বলে নিবন্ধে কড়া সমালোচনা করে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইলাম বলেন, তাতে বিশ্বশান্তিরক্ষা মিশনে বাহিনীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং প্রশ্ন তৈরি হবে।
জাতীয় নির্বাচনের ভোটের চিত্র তুলে ধরে মাইলাম বলেন, ‘বিরোধী দলের প্রার্থীরা যেন তাদের আসনগুলোতে কোনো রকমের প্রচার-প্রচারণা না চালায়, বাইরে না যায়, সে জন্য হুমকি আর ভয় দেখানো হয়েছিল। মিথ্যা মামলায় অনেককে আটক করা হয়। অনেকের নামে আগেই আদালতে প্রহসনের মামলা দায়ের করা ছিল। কিছুসংখ্যক মানুষকে গুম করা হয়।
গ্রামে মহিলা ভোটারদের ভোট না দিতে ভয় দেখিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আর যারা ভোট দিতে যাওয়ার সাহস দেখিয়েছে তাদেরকে হুমকি দিয়ে কিংবা পুলিশ দিয়ে বাধা দেয়া হয়েছে। আর কেন্দ্রের ভেতরে আওয়ামী লীগের দলীয় লোকজন ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছে। আমার এক বন্ধু জানিয়েছে, ‘সে যে ভোটকেন্দ্রে গিয়েছিল তার সবগুলো ভোট কাস্ট করা হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষে’।
পুলিশকে এবং তাদের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগকে এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি যেটা বলি এ রকম নির্বাচনের ফল বাংলাদেশের কোনো মানুষই বিশ্বাস করবে না। এমনকি আওয়ামী লীগের সমর্থকেরাও না। বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ সমর্থকও এ ভোটের ফলকে অতিরঞ্জন মনে করে যদিও তারা মুখ ফুটে এ কথা বলার সাহস পাবে না।’
মাইলাম লিখেছেন, ‘যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছিলেন তারা জানতেন, নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে, কয়েকদিন আগে এবং নির্বাচনের দিন আওয়ামী লীগ যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে তা ছিল দলকে জেতানোর পরিকল্পনা। তাই পর্যবেক্ষকেরা হতবাক হননি। এটাও স্পষ্ট ছিল যে, আওয়ামী লীগ কী করবে তা ছক করে রেখেছে। তবে সেনাবাহিনী নির্বাচনে কেমন ভূমিকা রাখবে সেটা নিয়ে কারো আগাম ধারণা ছিল না।
আমার ধারণা, নির্ধারিত সময়েরও দুই সপ্তাহ পর সেনাবাহিনী মাঠে নামিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আমাদের মধ্যে এখনো যাদের স্মৃতি উজ্জ্বল তাদের মনে আছে, অতীতে গণতন্ত্রের জন্য সেনাবাহিনীর ভূমিকা ছিল আশাব্যঞ্জক। ধারণা করেছিলাম তারা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করবে এবং নির্ভুল গণনায় সহায়তা করবে। আমরা যারা সেনাবাহিনীকে নিয়ে আশা করেছিলাম যে, এবারো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটবে তারা গভীরভাবে হতাশ হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘কোনো বিরোধী দল ছাড়াই আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে একদলের শাসন কায়েম করে। এরপরই যুক্তি উঠে এ সরকার অবৈধ, নিরপেক্ষ কমিশনের অধীনে নতুন নির্বাচনের আয়োজন করা যেতে পারে। বিএনপি নির্বাচন বয়কট না করলে সরকার জয়ের কোনো সুযোগ পেত না এ রকম কথাও শুনা যায়।’
নির্বাচনে ভোট চুরি হয়েছে উল্লেখ করে মাইলাম আরো বলেন, ‘ভোট চুরির নির্বাচনের পর বাংলাদেশের মানুষের মনের অবস্থাটা কেমন তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ক্লিপের উদাহরণ টেনেই বুঝিয়ে দেয়া যায়। ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, একটি ক্লাসরুমে পাঠ নিতে বসে আছে ১০-১১ বছর বয়সী ২০ জনের মতো শিক্ষার্থী। কাসে এসে শিক্ষক ব্ল্যাকবোর্ডে লিখলেন ২+২=৫ এবং সব ছাত্রকে নির্দেশ দিলেন এটাই সত্য, মানতে হবে।
একজন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানালো এবং বলল, না- এটা সত্য নয়। আমরা সবাই জানি ২+২=৪। অবশেষে প্রতিবাদ করায় ছাত্রটিকে শাস্তি দেয়া হয় এবং হত্যা করা হয়। তারপর শিক্ষক আবার পাঠে মন দিলেন এবং উচ্চস্বরে পড়া শুরু করলেন ২+২=৫। শেষ দিকে দেখা যায় ভুল লেখা থেকে পেন্সিল একবার সরে আসে এবং হিসাবে পাঁচের বদলে শিক্ষার্থীরা সেটাকে চার লেখা শুরু করে।
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার বার্তাটা তুলনা করা যায় ব্রিটিশ উপন্যাসিক এবং সাংবাদিক জর্জ ওরওয়েলের সেই বার্তার সাথে। বার্তাটা এমন, সরকার নিজের ইচ্ছেমতো করে কোনটা সত্য সে ঘোষণা দেয় কিন্তু দিন শেষে মানুষ সেটাকে আসলে মেনে নেয় না। তারা প্রকৃত সত্যের ছাঁকুনি দিয়েই সব কিছু বিচার করে। প্রকৃত কথা হলো নির্বাচনের ফলাফল (৩০ ডিসেম্বরের ভোট) চুরি করা হয়েছে। আর যারা নিজেকে সরকার দাবি করছে তারা অবৈধ।’ জাতীয়