ছবি: সংগৃহীত: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলাকারী শেতাঙ্গ বর্ণবাদী ব্রেনটন টেরেন্ট |
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলাকারী একজন কট্টর শেতাঙ্গ বর্ণবাদী। তার নাম ব্রেনটন টেরেন্ট। ২৮ বছর বয়সী এ সন্ত্রাসী মুসলমান ও অভিবাসী বিদ্বেষী। তার মতে, মুসলমানরা ইউরোপের দেশগুলো দখল করে নিচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করতে এবং ইউরোপে ইসলামপন্থীদের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে সে এ হামলা চালিয়েছে।
শুক্রবার হামলার আগে নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে ৭৩ পৃষ্ঠার কথিত মেনিফেস্টো (ঘটনার কারণ) প্রকাশ করে ব্রেনটন। এতে সে মুসলমানদের দাস, সন্ত্রাসী ও দখলদার হিসেবে উল্লেখ করে।
অভিবাসী ও মুসলমানদের প্রতি চরম ঘৃণা প্রকাশ করে সে বলে, ইউরোপ থেকে অভিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করে ‘মাতৃভূমি’ পুনরুদ্ধার করা তার লক্ষ্য। অন্য ধর্ম থেকে মুসলমানে পরিণত হওয়াকে সে রক্তের সঙ্গে বেইমানি বলে উল্লেখ করে।
ব্রেনটন লিখেছে, আমাদের ভূখণ্ড কখনোই অনুপ্রবেশকারীদের ভূখণ্ড হবে না। আমাদের মাতৃভূমি আমাদের এবং যতদিন পর্যন্ত শ্বেতাঙ্গরা জীবিত থাকবে, ততদিন তারা আমাদের ভূখণ্ড দখল করতে পারবে না। তারা কখনোই আমাদের লোকদের জায়গা দখল করতে পারবে না।
সে বলে, সংজ্ঞায়িত করলে এটি একটি সন্ত্রাসী হামলা। কিন্তু দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে এটি একটি পক্ষপাতমূলক হামলা বলেই আমি মনে করি।
হামলাকারীর পরিচয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, হামলাকারী মৌলবাদী, কট্টর ডানপন্থী ও সহিংস সন্ত্রাসী ছিল। সে অস্ট্রেলিয়ায় হাজতবাসেও ছিল। দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অপরাধসংক্রান্ত পুরনো রেকর্ড আছে। তার বাড়ি গ্রাফটন শহরে।
এ ভয়াবহ হামলা চালানোর জন্য ২ বছর ধরে পরিকল্পনা করছিল জানিয়ে ব্রেনটন আরও বলে, ৩ মাস আগেই সে ক্রাইস্টচার্চে হামলার সিদ্ধান্ত নেয়।
ব্রেনটন টেরেন্ট তার কথিত মেনিফেস্টোতে নিজেকে একজন ‘সাধারণ শ্বেতাঙ্গ’ বলে উল্লেখ করে। সে লিখেছে, ২০১৭ সালে সুইডেনের স্টকহোমে সন্ত্রাসী হামলায় ১১ বছর বয়সী শিশু এব্বা অকারলান্ডের নিহত হওয়ার ঘটনার শোধ নিতে এ হামলাটি চালানো হয়েছে।
তার ভাষ্য, ‘স্টকহোমের ওই ঘটনাটিই আমাকে প্রথম এ ধরনের হামলার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, বিশেষ করে ওই ১১ বছর বয়সী মেয়েটির মৃত্যু। এব্বার মৃত্যু হয়েছে ‘দখলদার’দের হাতে... আমি এ ধরনের হামলা এড়িয়ে যেতে পারি না।’
সে আরও লেখে, এটি ঐতিহাসিকভাবে ইউরোপের ভূমিতে বিদেশি ‘দখলদার’দের কারণে শত শত মানুষের মৃত্যুর পাল্টা প্রতিশোধ।
মেনিফেস্টোতে ব্রেনটন টেরেন্ট আরও বলে, ২০১১ সালে নরওয়ের অসলোতে ৭৭ জনকে হত্যাকারী আন্ডারস ব্রেইভিকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে সে এ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।
এছাড়া সে নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক বলেও দাবি করে। এ হামলার ঘটনায় সে ট্রাম্পের উগ্র সমর্থক ক্যানডিস ওউনসের কাছ থেকেও অনুপ্রাণিত হয়েছে।
ব্রেনটন তার টুইটার অ্যাকাউন্টের হেডার ফটো হিসেবে যে ছবি দিয়েছে, সেখানে ২০১৬ সালে ফ্রান্সের নিসে শহরে বাস্তিল ডে উদযাপন অনুষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত একজনের ছবি দেখা যায়। সেদিন জনতার ওপর ট্রাক চালিয়ে দেয়ার ঘটনায় ৮৪ জনের প্রাণহানি হয়েছিল।
নিউজিল্যান্ডে মাত্র ১ শতাংশ মুসলমান। তারপরও কেন এ দেশটিকে হামলার জন্য বেছে নেয় ব্রেনটন- এর কারণ হিসেবে সে লিখেছে, দেশটি ইউরোপের অন্য দেশের চেয়ে তুলনামূলক দুর্গম। তারপরও এখানে দিন দিন মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে। হামলার মাধ্যমে এ বিষয়ে সে সবাইকে সতর্ক করতে চেয়েছিল। নিজের পারিবারিক অবস্থা ও শৈশবের বেদনা উল্লেখ করে সে লিখেছে, আমি নিুবিত্ত পরিবারে জন্মেছি, বাবা-মা স্কটিশ আইরিশ এবং ইংলিশ ছিল, আমার কোনো নিয়মিত শৈশব ছিল না।
ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদে প্রাণঘাতী হামলা চালাতে যখন গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল, শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ব্রেনটন তখন লোক গান ও সামরিক সঙ্গীত শুনছিল। এরপর একটি সরু গলিতে গাড়িটি পার্ক করে রেখে অস্ত্র নিয়ে মসজিদের দিকে এগিয়ে যায় সে।
তার গাড়ি থেকে অন্তত ৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। যে অস্ত্র-সরঞ্জাম নিয়ে ব্রেনটন টেরেন্ট ও তার সহযোগীরা হামলা চালিয়েছে সেখানে মুসলিমদের ওপর বিগত সাম্প্রদায়িক হামলার তথ্য তুলে ধরে এ ধরনের হামলা চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহমূলক বিভিন্ন শব্দ-বাক্য দেখা যায়। হামলায় জড়িত সন্দেহে এক নারীসহ চারজনকে আটক করলেও ব্রেনটনকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
সূত্র : যুগান্তর আন্তর্জাতিক