ছবি : সংগৃহীত |
সকালে বা বিকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সাধারণত দাঁত ব্রাশ করার পরেই মুখের বাজে স্বাদ বা দুর্গন্ধ কেটে যায়। কিন্তু তার পরেও যদি এই সমস্যা থেকে যায় তাহলে বুঝতে হবে অন্য কোনও কারণেই মুখের দুর্গন্ধের সমস্যা হচ্ছে। তবে এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম কারণ হতে পারে এই দুর্গন্ধের। কিছু বিশেষ খাবারে মুখে দুর্গন্ধ দেখা যেতে পারে। তামাক জাতীয় পণ্য ব্যবহারে মুখে দুর্গন্ধ হয়। দাঁতের সমস্যা থাকলে দুর্গন্ধ খুব স্বাভাবিকভাবেই ঘটে থাকে।
নিম্নলিখিত কয়েকটি কারণে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে:
1. পুষ্টির ঘাটতি:
আপনার পুষ্টি পদার্থের মধ্যে দস্তা এবং ভিটামিন বি 12 এর অভাব খারাপ শ্বাসের কারণ হতে পারে যার ফলে মুখের স্বাদ পরিবর্তিত হয়। অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এর অন্যতম কারণ হতে পারে। শরীরে আয়রন এর ঘাটতি হলেও মুখে দুর্গন্ধ হয়। এটি নিরাময় করার সহজ উপায় হল আপনার ডায়েট কিছু পরিবর্তন করতে হবে। শরীরের সঠিক আয়রন সরবরাহ প্রয়োজন যা বাদাম, মটরশুটি, দানা শস্য আপনাকে জোগান দিবে।
2. মৌখিক সমস্যা এবং ঠাণ্ডা লাগা:
চিকিৎসার পরিভাষায় মুখের দুর্গন্ধকে হ্যালাইটোসিস বলেই ডাকা হয়। দাঁত, মস্তিষ্ক এবং মুখ সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যায় ভুগলে স্বাদ কোষ গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুখের আর্দ্র ও গরম জায়গা গুলিতে থ্রাশ জন্মায়, যে কোনও মানুষেরই এটা হতে পারে। তবে শিশু ও বয়স্ক, অর্থাৎ যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাঁদের এই সমস্যা বেশি হয়। চিনি খেলে এই সমস্যা কমে যায়।
3. ওষুধ
ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, থাইরয়েড, হৃদরোগ, গ্লুকোমা, রক্তচাপ এবং আরও বেশ কিছু রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত ওষুধগুলি আপনার মুখের অপ্রীতিকর স্বাদের জন্য দায়ী।
4. সংক্রমণ:
আপনার শরীরের সংক্রমণ আপনার স্বাদ কোষে ও প্রভাব ফেলতে পারে। ভাইরাল ইনফেকশন, ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এবং ফুসফুসের সংক্রমণে প্রায়ই মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। ঠান্ডা, টনসিলাইটিস, সাইনাসাইটিস এবং কানের মধ্যেকার অংশে সংক্রমণ হলেও এমনটা হয়। হেপাটাইটিস বি একটি লিভার সংক্রমণ যার প্রধান উপসর্গই হল মুখের তিক্ত স্বাদ।
5. গর্ভাবস্থা:
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস মহিলার মুখের মধ্যে একটি তিক্ত স্বাদ অনুভব করেন। এটি খুবই সাধারণ। এই সময় শরীরের এস্ট্রোজেন হরমোন উচ্চ মাত্রায় থাকে বলেই এমনটা হয়। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস মহিলাদের জন্য মুখের গন্ধ সাধারণ বিষয়।
6. মেনোপজ
যে মহিলারা মেনোপজের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন বা মেনোপজ যাঁদের কাছাকাছি প্রায়ই তাঁদের মুখের মধ্যে তিক্ত স্বাদ থাকে। এটি সাধারণত শুষ্ক মুখের কারণে হয় যা মেনোপজের একটি উপসর্গ। তিক্ত স্বাদের আরেকটি সম্ভাব্য কারণ মুখের মধ্যে প্রদাহ যা ইস্ট্রোজেন কমে যাওয়ার কারণে হয়। যে মহিলারা মেনোপজের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন প্রায়শই তাঁদের মুখের মধ্যে তিক্ত স্বাদ থাকে।
7. অস্ত্রোপচার:
দাঁতের অস্ত্রোপচার, কানের অস্ত্রোপচার, উচ্চ এয়ারওয়ে এন্ডোসকপি ও মৌখিক অস্ত্রোপচারে স্বাদ কমে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকেই। অনেক কেমোথেরাপির ফলে মুখের মধ্যে ধাতব বা টক স্বাদ পাওয়া যায়। মাথা এবং ঘাড়ের ক্যান্সার চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত রেডিয়েশন থেরাপির কারণেও ধাতব স্বাদ আসতে পারে।
8. অ্যাসিড রিফ্লাক্স:
অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ফলে আপনার পেটের অ্যাসিড খাদ্যনালী অব্দি উঠে আসে। যার ফলেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। অনেক সময় মশালাদার খাবার খাওয়ার ফলে বা অ্যাসিড কমানোর ওষুধ খাওয়ার ফলেও এই দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে।
9. রোগ:
উপরের শ্বাসযন্ত্রে প্রদাহ, ফ্লু বা সাধারণ ঠান্ডা লাগা ইথাদি সাধারণ অসুখ বিসুখেও মুখের দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে। ক্যান্সার, হাইপারথাইরয়েডিজম, ডায়াবেটিস এবং অ্যামিলোডোসিস রোগের ফলেও মুখের স্বাদ ও গন্ধ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ডিসঅর্ডারস এবং লালা গ্রন্থির সমস্যাতেও মুখে দুর্গন্ধ হয়।
স্বাস্থ্য