Saturday, January 19, 2019

এরশাদ গুরুতর অসুস্থ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাবেন

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান ও নবগঠিত একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা এইচএম এরশাদ গুরুতর অসুস্থ। তার শরীর বেশ ভেঙে পড়েছে। প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি।

অনেক দিন ধরে তার উঠতে-বসতে ও হাঁটাচলায় সমস্যা হলেও গত দুইদিন ধরে তার নড়াচড়া করতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। পরিমাণমতো খেতেও পারছেন না তিনি। ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিত্সাধীন এরশাদ এককথায় বিছানায় পড়ে গেছেন। এই অবস্থায় আগামীকাল রবিবার তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হচ্ছে।

এরশাদের ছোট ভাই ও জাপার কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘এরশাদ সাহেবের শরীর দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়েছে। হাঁটাচলা তো করতেই পারছেন না, এমনকি বিছানায় নড়াচড়া করতেও তার অনেক কষ্ট হচ্ছে। চিকিত্সকরা খাবারের পরিমাণ বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন এরশাদ সাহেবকে। কিন্তু তিনি ঠিকমতো খেতেও পারছেন না, আজ (শুক্রবার) একটু খেয়েছেন, তাও পরিমাণে খুব সামান্য। সম্ভবত তার লিভারে খুব সমস্যা হচ্ছে।’

জিএম কাদের জানান, এরশাদ আজ শনিবার সিএমএইচ থেকে বারিধারার বাসায় যাবেন। সেখান থেকে আগামীকাল বেলা ১২টা ২০ মিনিটের একটি ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর যাবেন। সিঙ্গাপুরে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে তিনি চিকিত্সা নেবেন, সেখানে হয়তো কয়েক সপ্তাহ থাকতে হতে পারে। জানা গেছে, এরশাদের সঙ্গে তার এক ছোট ভাই, ব্যক্তিগত সচিব ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর (অব.) খালেদ আখতার ও একজন ব্যক্তিগত স্টাফ সিঙ্গাপুর যাবেন।

সিএমএইচে এরশাদকে দেখতে যাওয়া জাপার একাধিক নেতা জানান, এরশাদ বর্তমানে একা-একা বাথরুমেও যেতে পারছেন না। ওষুধ খাওয়ার জন্য পানির গ্লাসও নিজ হাতে ধরতে পারছেন না। কথাবার্তাও খুব কম বলছেন। এমনকি দলের ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাগজপত্রে স্বাক্ষর করার জন্য কলম ধরতেও তার কষ্ট হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ৮ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এরশাদ। এরপর থেকে বেশিরভাগ সময় তাকে হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে। ১০ই  থেকে ২৬ই  ডিসেম্বর ২০১৮ ইং পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে চিকিত্সা নিলেও তার অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। রংপুর-৩ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও অসুস্থতার কারণে একদিনও প্রচারণায় যেতে পারেননি। গত ৫ই  জানুয়ারি ২০১৯ ইং হুইল চেয়ারে করে সংসদ ভবনে স্পিকারের কার্যালয়ে গিয়ে এমপি হিসেবে শপথ নেন।

এরশাদের অবর্তমানে বা চিকিত্সাধীন অবস্থায় বিদেশে থাকাকালীন জাপার কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন বলে দলীয় বিস্বাস যোগ্য সূত্রে জানা গেছে। গতকাল জাপার পক্ষ থেকে এরশাদ এর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এতথ্য জানানো হয়। অবশ্য ‘সাংগঠনিক নির্দেশনা’ শিরোনামে লেখা এই চিঠিতে এরশাদ স্বাক্ষর করেছেন গত বুধবার। সেটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে গতকাল। জিএম কাদের বলেন, ‘এরশাদ সাহেবের অবর্তমানে কিংবা চিকিত্সার জন্য বিদেশে থাকাকালে কে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তা নিয়ে যেন কোনো অস্পষ্টতা না থাকে, সে কারণেই তিনি বিষয়টা একদম স্পষ্ট করে দিয়েছেন। অসুস্থ হলেও তার মানসিক অবস্থা ঠিক আছে। সেই কারণে বিদেশে যাওয়ার আগে তিনি সবকিছু ঠিকঠাক করে যাচ্ছেন।’

এর আগে এরশাদ গত ১লা  জানুয়ারি ২০১৯ইং  এক চিঠিতে তার অবর্তমানে জাপার চেয়ারম্যান পদে জি এম কাদেরের নাম ঘোষণা করেছিলেন। ‘অবর্তমান’ শব্দটি স্পষ্ট না হওয়ায় দলের ভেতরে এনিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এই ধোঁয়াশা দূর করতেই নতুন করে এরশাদ নতুন করে নির্দেশনা দিলেন।